অর্থনৈতিক রিপোর্টার
বন্দির হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছে কারাপণ্য। মেলায় ষষ্ঠ দিন থেকে বিক্রি শুরু করলেও ক্রেতা আকর্ষণ থাকায় এরই মধ্যে ২৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এখানে মিলছে প্রায় ৪০টি কারাগারে থাকা বন্দিদের নিপুণ হাতে তৈরি বাহারি সব জিনিস।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার অন্যসব প্যাভিলিয়ন থেকে ব্যতিক্রম কারাপণ্যের প্যাভিলিয়নটি। কারাগারের আদলে তৈরি করা এতে মিলছে দেশের প্রায় ৪০টি জেলের বন্দিদের হাতে তৈরি বাঁশ ও বেতের মোড়া, পাটের তৈরি ব্যাগ, নকশিকাঁথা, পাপোশসহ গৃহসজ্জার বাহারি সব পণ্য। বন্দির হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরের উদ্দেশ্যেই এমন উদ্যোগ। সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকায় মিলছে এসব কারাপণ্য। টেকসই ও ব্যতিক্রম হওয়ায় আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। তারা বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কয়েদিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সময় ও ধৈর্য নিয়ে পণ্যগুলো তৈরি করা হয়েছে। মান যেমন ভালো, দামও তুলনামূলক কম। কারাপণ্য বিক্রির লভ্যাংশের ৫০ ভাগ দেয়া হয় বন্দিদের। এই টাকা তারা নিজেদের জন্য খরচ করতে পারেন, কিংবা দিতে পারেন পরিবারকে। আর বাকি অর্ধেক জমা দেয়া হয় সরকারি কোষাগারে। বাংলাদেশ জেলের ডেপুটি জেলার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, হস্তশিল্পের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই বন্দির হাতকে কর্মীর হাতে রুপান্তর করা হচ্ছে। মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে কারাবন্দিদের পণ্য মেলায় তুলে ধরতে পেরে খুশি কর্তৃপক্ষও। কারা অধিদফতরের হিসাবরক্ষক মাসুদ মিয়া বলেন, একজন বন্দিকে পুনর্বাসিত করার সুযোগ দিতেই নেয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।
এবারের বাণিজ্য মেলায় তুর্কিসহ বিশ্বের ৭টি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানসহ রয়েছে ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়েছে জুলাই চত্বর, ছত্রিশ চত্বর ও তারুণ্যের প্যাভিলিয়ন। ই-টিকিটের ব্যবস্থা থাকায় প্রবেশ পথে রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা। প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল বা প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস। মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর বা পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ বছর। বিদেশি উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে রয়েছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় রয়েছে শিশু পার্কও। মেলা মাসব্যাপী সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মেলা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আয়োজন করা হতো। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলা আয়োজন করা হয়নি। আর মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলা পূর্বাচলে বিবিসিএফইসিতে আয়োজন করা হয়।
